অনলাইন ডেস্ক:
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, প্রখ্যাত আরবি সাহিত্যিক, চট্টগ্রাম জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং অসংখ্য আলেমের উস্তাদ আল্লামা সুলতান যওক নদভী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (২ মে) দিবাগত রাত ১২টার পর ৮৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আল্লামা নদভী গত ১৮ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
জামেয়া দারুল মাআরিফের উস্তাদ মাওলানা মাহমুদ মুজিব আল্লামা নদভীর ইন্তেকালের খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে, তার দাফন-কাফনের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
আল্লামা সুলতান যওক নদভী ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সভাপতি, জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক এবং বিশ্ব মুসলিম লিগের বাংলাদেশ শাখার প্রধান। আরবি ভাষায় অগাধ পাণ্ডিত্য ও সাহিত্যকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি দেশ-বিদেশে সমাদৃত ছিলেন।
তার মৃত্যুতে সারাদেশে আলেম-উলামা ও সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জ্ঞান জগতের এক নক্ষত্রের বিদায়:
বিশ্ব বরেণ্য এই জ্ঞানসাধকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন বিভিন্ন মহল। শোকবার্তায় অনেকেই একে জ্ঞান জগতের এক নক্ষত্রের বিদায় হিসেবে উল্লেখ করছেন।
আল্লামা সুলতান যওক নদভী: জীবন ও কর্ম:
আল্লামা সুলতান যওক নদভী ১৯৩৭ সালে চট্টগ্রামের মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের জাগীরাঘোনা মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে আল-জামেয়া আল-ইসলামিয়া পাটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে, ১৪০৪ হিজরি সালে ভারতের দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা থেকে সম্মানসূচক আলমিয়াত ডিগ্রি লাভ করেন।
তার কর্মজীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তিনি ১৯৫৯ সালে চন্দনাইশ উপজেলার মাদ্রাসা রাশিদিয়াতে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। এরপর ১৯৬০ সালে জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জে এবং ১৯৬২ সালে আল জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ায় যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পটিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে মুরাদপুরে কাশেফুল উলুম নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে, আল্লামা হারুন বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহ্ এর আহ্বানে তিনি আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। আরবি সাহিত্যের চর্চার জন্য তিনি নাদিয়াতুল আদাব নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালু করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর তিনি দ্বিতীয় বার আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় যোগদান করেন এবং সেখানে থাকাকালীন আরবি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘আস-সুবহুল জাদিদ’ সম্পাদনা করতেন। ১৯৮১ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সেমিনারে যোগ দিতে ভারত যান এবং দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামাতে দুই মাস অবস্থান করেন। ১৯৮৬ সালে তাকে রাবেতায়ে আল-আদাব আল-ইসলামির ট্রাস্টি বোর্ডে নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি এর বাংলাদেশ আঞ্চলিক কার্যালয়ের চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৪ সালে তার আমন্ত্রণে আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী বাংলাদেশ সফর করেন এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পরামর্শ দেন। অবশেষে, ১৯৮৫ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো পটিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে প্রতিষ্ঠা করেন জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া।
আল্লামা সুলতান যওক নদভীর উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত কাজের মধ্যে রয়েছে:
* আত্ব-তরীকু ইলাল ইনশা
* আমার জীবনকথা
* আল-ক্বিরাআতুল আরাবিয়্যাহ
* ইশরুনা দারসান
* তাছহিলুল ইনশা
বিশ্বের এই বরেণ্য আলেমের প্রয়াণ দেশের শিক্ষা ও ইসলামী অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি।