কুতুবদিয়ায় পিডিবির আরই সুভাষ কান্তি চৌধুরী: সরকারি চাকরিতে থেকেও আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয়তার অভিযোগ

অপরাধ আইন ও আদালত উপজেলা কক্সবাজার রাজনীতি
স্কিনসর্ট ব্যক্তিগত আইডি থেকে সংগৃহীত

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কুতুবদিয়া সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী সুভাষ কান্তি চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ’, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার সভাপতির পদ ধারণ করে সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। সুভাষ কান্তি চৌধুরী বিপিডিবি’র সহকারী প্রকৌশলী, যার পরিচিতি নম্বর ১১-১৩৬৪।

গত ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মোহাম্মদ সাজিদ নামক এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে একটি পোস্টে লেখেন, “আপনাকে ভালো মনের মানুষ মনে করেছিলাম কিন্ত তা ভুল ছিল, এটা ছিল আপনার একটা মুখোশ। আপনাকে যে পাত্রে রাখে আপনি সে পাত্রের রং ধারণ করেন। এক কথায় গিটগিটির মত। আপনাকে আর চিনার বাকি নাই। suvash showdhury স্যার।” ওই ফেসবুক পোস্টের প্রথম মন্তব্যে সাজিদ প্রকৌশলী সুভাষ কান্তি চৌধুরীর ঈদ শুভেচ্ছা সম্বলিত একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। উক্ত ফটোকার্ডে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, শেখ মুজিবুর রহমান, পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি সংযুক্ত দেখা যায়।

প্রকৌশলী সুভাষ কান্তি চৌধুরীর ফেসবুক আইডি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৭ জুলাই তিনি একটি কমিটির ছবি পোস্ট করেন। যেখানে কাপ্তাই উপজেলায় কর্মরত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, কাপ্তাই উপজেলার ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই কমিটির ১ নম্বর অর্থাৎ সভাপতি পদেই কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের বর্তমান আবাসিক প্রকৌশলী (সহকারী প্রকৌশলী) সুভাষ কান্তি চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একটি দাপ্তরিক আদেশের (সূত্র নং- ২৭.১১.০০০০.২১০.১৩.০০২.২০-১০) মাধ্যমে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি লাভের অভিযোগও রয়েছে।

সুভাষ কান্তি চৌধুরীর ফেসবুক ওয়াল ঘুরে আরও দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৯ জুলাই একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “মাননীয় সংসদ সদস্য, রাঙ্গামাটি ও বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, রাঙ্গামাটি এর উপদেষ্টা বাবু দীপংকর তালুকদার মহোদয়ের সম্মতিতে আমাকে বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, কাপ্তাই উপজেলা শাখার সভাপতি মনোনীত করায় উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি”। তার ফেসবুক আইডিতে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া এবং আওয়ামী লীগ দলীয় বিভিন্ন সংবাদের লিঙ্কও শেয়ার করতে দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিতে কর্মরত থেকেও আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠনের সভাপতির পদ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে সুভাষ কান্তি চৌধুরী বলেন, “আমি খাগড়াছড়ি জিলা, বান্দরবান জিলা, রাঙামাটি জিলার ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি। সেটা ঠিক, আর এটা তো আমাদের প্রকৌশলীদের পেশাজীবী সংগঠন।” তবে, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের মতো আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠনের পদ তিনি ধারণ করতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী সুভাষ কান্তি চৌধুরীর অপসারণ চেয়ে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কাজী তাহমিদ বলেন, “সরকারি চাকুরী করেও তিনি সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী ও দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এই কর্মকর্তা শুধু একটি আমলাতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করেননি, বরং তিনি তার পদ ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে নিরপেক্ষতা ও জনস্বার্থে কাজ করার পরিবর্তে তিনি দলের প্রতি অনুগত থেকে সাধারণ জনগণের অধিকার খর্ব করেছেন। এখন, আওয়ামী লীগের শাসন শেষ হওয়ার পরও তার মতো পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তির এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।”

এ বিষয়ে আইনি মতামত জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদ হৃদয় বলেন, “সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ২৫(১) ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হইতে অথবা অন্য কোনোভাবে উহার সঙ্গে যুক্ত হইতে পারিবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিতে বা কোনো প্রকারেই সহায়তা করিতে পারিবেন না।” তিনি আরও বলেন, বিধিমালার এই ধারা লঙ্ঘনের শাস্তি চাকরিচ্যুতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *