কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল থাবায় অস্তিত্ব সংকটে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন দ্বীপ কুতুবদিয়াকে রক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে টেকসই বেড়িবাঁধ, ফেরি সার্ভিস ও আজম সড়ককে আধুনিকায়নের দাবিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারকলিপি পেশ করেছে ‘দ্বীপশিখা (কুতুবদিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা)’।
স্মারকলিপিতে জানানো হয়, কুতুবদিয়ার ভূখণ্ড প্রতিবছরই ভয়াবহ হারে ক্ষয়ে যাচ্ছে। ১৯৬০ সালে দ্বীপটির আয়তন ছিল ২৫০ বর্গকিলোমিটার, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০০ বর্গকিলোমিটারে। ইতোমধ্যে দ্বীপটির অর্ধেকেরও বেশি অংশ সাগরের গর্ভে হারিয়ে গেছে। শত শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যবাহী এ দ্বীপে বসবাসরত প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ জলবায়ু সংকট ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে স্মারকলিপিতে বলা হয়, “সামান্য জোয়ারেই দ্বীপের বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হয়, ভাঙনশীল উপকূলে বসবাসকারী মানুষজন তাদের বসতভিটা ও কৃষিজমি হারাচ্ছেন। এতে শুধু মানুষের জীবন-জীবিকাই নয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।” স্মারকলিপিতে অবিলম্বে মানসম্পন্ন ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় বন সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ, উপকূল সুরক্ষায় জরুরি বাজেট বরাদ্দ এবং জাতীয় পর্যায়ে একটি আলাদা তহবিল গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
যোগাযোগ অবকাঠামোর দুরবস্থাও গুরুত্বসহকারে তুলে ধরে স্মারকলিপিতে বলা হয়, কুতুবদিয়ার সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ অত্যন্ত দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। নারী, শিশু ও বয়স্ক নাগরিকরা প্রতিনিয়ত স্পিডবোট ও ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে কুতুবদিয়া চ্যানেল পারাপার করেন। বৈরী আবহাওয়ার সময় এই যাত্রা হয়ে ওঠে মৃত্যুর ঝুঁকিসম্পন্ন। স্মারকলিপিতে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার উল্লেখ করা হয়, যেখানে এক গর্ভবতী নারী স্পিডবোটে সন্তান প্রসব করেন।
এই পরিস্থিতিতে তিনটি সম্ভাব্য রুট—মগনামা ঘাট থেকে বড়ঘোপ (৩.৭৫ কিমি), মগনামা ঘাট থেকে দরবার ঘাট (৪ কিমি) ও ছনুয়া ঘাট থেকে ধূরুং ঘাট (১.৮৪ কিমি)—বিবেচনায় নিয়ে ফেরি সার্ভিস চালুকরণ এবং প্রয়োজনীয় এপ্রোচ রোড নির্মাণের দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে আরও জানানো হয়, দ্বীপের অভ্যন্তরীণ প্রধান সড়ক আজম রোড (Z1076) মাত্র ৩.৫ মিটার বা ১১.৫ ফিট প্রশস্ত। এতে প্রায়শ সংঘর্ষ ও দুর্ঘটনা ঘটে। এই রোডকে ৭.৩ মিটার বা ২৪ ফিট প্রশস্ততায় উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
স্মারকলিপির শেষাংশে বলা হয়, “বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার—বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও নিরাপদ যাতায়াত—রক্ষায় কুতুবদিয়া দ্বীপের সুরক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন আজ সময়ের দাবি।”
দ্বীপশিখার সভাপতি ও বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি কুতুবদিয়ার সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে প্রেরণ করা হয়।
সারসংক্ষেপে দাবিসমূহ:
১. অবিলম্বে কুতুবদিয়ার চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
২. বন সংরক্ষণে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ।
৩. উপকূলীয় বাজেট ও জরুরি সুরক্ষা তহবিল চালু।
৪. কুতুবদিয়া-মগনামা চ্যানেলে ফেরি সার্ভিস চালু ও সম্ভাব্য তিনটি রুট বিবেচনায় প্রয়োজনীয় এপ্রোচ রোড নির্মাণ।
৫. কুতুবদিয়ার মূল সড়ক আজম রোড (Z1076) কে ২৪ ফুট প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ।