আজ ১ মে, ২০২৫। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এক রক্তঝরা ইতিহাসের স্মারক এই দিন। ১২৭ বছর আগের সেই উত্তাল শিকাগোর হে মার্কেটের শ্রমিকদের আত্মত্যাগ আজও বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শ্রমিকের প্রেরণার উৎস। দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে তাদের সাহসী সংগ্রাম শুধু একটি দাবি আদায়ই করেনি, বরং শ্রমিক শ্রেণির মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।
আজকের এই মহান দিনে, আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সেই অকুতোভয় শ্রমিকদের, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ন্যায্য মজুরি ও মানবিক কর্মপরিবেশের জন্য। তাদের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে, অর্জিত হয়েছে বহু শ্রম অধিকার।
এবছরের মে দিবসের প্রতিপাদ্য – ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ – একটি নতুন বার্তা বহন করে। এটি মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে এই প্রতিপাদ্যের তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে মে দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক, আর তাদের যৌথ প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি খাতের উন্নতিতে শ্রমিক ও মালিক উভয়েরই মেধা ও শ্রম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। একটি নতুন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার কোনো বিকল্প নেই। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ঐক্য ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
সরকারও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে যে, যৌক্তিক কারণ ও শ্রম আইন যথাযথভাবে পরিপালন ব্যতীত কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একইসাথে, মহান মে দিবসে সকল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মে দিবস উপলক্ষ্যে আজ সরকারি উদ্যোগে র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। গণমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরা হচ্ছে।
আসুন, আজকের এই মহান দিনে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। শ্রমিক ও মালিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি সমৃদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করি। শিকাগোর সেই রক্তঝরা পথ আমাদের আজও দিকনির্দেশনা দেয়, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সাহস যোগায়। মে দিবসের এই চেতনা চিরকাল আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাক – এই আমাদের প্রত্যাশা।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাণী:
“শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে মে দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক, আর তাদের যৌথ প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় করতে হবে। আমরা যদি ঐক্য ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখি, তাহলে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠবে।”