কুতুবদিয়া-মহেশখালীর বেড়িবাঁধ সংস্কার ও কুতুবদিয়া ফেরি চালুর লক্ষ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য চিঠি দিলেন এমপি হামিদ আযাদ

উপজেলা কক্সবাজার কৃষি জীবনযাপন পরিবেশ পর্যটন প্রধান খবর বিনোদন বিশেষ প্রতিবেদন ব্যবসা ও বাণিজ্য ভ্রমণ রাজনীতি শিক্ষা ও সংস্কৃতি স্বাস্থ্য
ছবি : সংগৃহীত

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

প্রবাল দ্বীপ কুতুবদিয়া এবং মাতারবাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা ভয়াবহ ভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায়, দ্বীপের জনবসতি, জীবিকা এবং সরকারি মেগা প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, কুতুবদিয়া ও মগনামার মধ্যে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবিও জোরালো হয়েছে।

এক সময়ের ২১৫ বর্গ কিলোমিটারের কুতুবদিয়া দ্বীপ ভাঙনের ফলে বর্তমানে মাত্র ৬২ বর্গ কিলোমিটারে সংকুচিত হয়েছে। প্রতি বছর লবণাক্ত সমুদ্রের পানি ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে কৃষি জমি, লবণের মাঠ ও জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ অত্যাবশ্যক।

অন্যদিকে, মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ধলঘাট এলাকার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কেন্দ্র হওয়ায় এখানে চলমান মেগা প্রকল্পের জমি এবং স্থানীয় জনপদ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে নয়াপাড়া থেকে ধলঘাটের সাইটপাড়া পর্যন্ত এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও, মহেশখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাংশেও ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যা বর্ষাকালে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

উপকূলীয় উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আযাদ জরুরি ভিত্তিতে কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর উপকূলীয় এলাকাকে জলোচ্ছ্বাস ও সমুদ্র ভাঙন থেকে রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বর্ষা মৌসুমের আগেই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ভাঙন রোধ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে একটি চিঠিও দিয়েছেন।

এদিকে, কুতুবদিয়া ও মগনামার মধ্যে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য উভয় প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে। সম্প্রতি, সাবেক সংসদ সদস্য ড. এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আযাদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর। প্রতিদিন নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। বৈরী আবহাওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আবেদনে একটি মর্মান্তিক ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে এক গর্ভবতী মা স্পিডবোটেই সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যা দ্বীপবাসীর চরম দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে।

ড. আযাদ আরও জানান যে, সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ এবং মহেশখালীতে ফেরি ও সি-ট্রাক সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। একইভাবে, কুতুবদিয়া-মগনামা ফেরি সার্ভিস চালু হলে কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নতি ঘটবে। বিশেষ করে দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং পর্যটকদের জন্য যাতায়াত সহজ হবে। আবেদনে আরও বলা হয়েছে যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে কুতুবদিয়া-মগনামা ফেরি সার্ভিস চালু এবং দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে নৌপরিবহন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের কাছে পাঠানো ডিও লেটারের স্মারক নম্বর যথাক্রমে ৮১৫ ও ৮১৩।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *