কুতুবদিয়া প্রতিনিধি (বারেক উল্লাহ):
কুতুবদিয়ার শিক্ষাঙ্গনে আজ এক বিষাদের সুর বেজে উঠলো। কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ অমজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, শিক্ষাগুরু হরি মোহন দাশ তাঁর দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনেছেন আজ।
বৃহস্পতিবার (২৯শে) বিদ্যালয়ের সেমিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক আবেগঘন বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁর সহকর্মী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। তাঁর বিদায় যেন কেবল একজন শিক্ষকের প্রস্থান নয়, অমজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি আলোকিত অধ্যায়ের সমাপ্তি।
প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করেও এই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুতুবদিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জনাব মুসলিম উদ্দিন। যদিও অনুষ্ঠানের ব্যানারে সভাপতি হিসেবে বড়ঘোপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব শাকের উল্লাহ বিএসসি-এর নাম ছিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হতে পারেননি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুতুবদিয়া (ইউআরসি) ইন্স্ট্রাক্টর মোহাম্মদ আলমগীর, কুতুবদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বদরুল আনাম মুবিন, সাংবাদিক মহিউদ্দিন কুতুবী এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা শমসের নেওয়াজ মুক্তা। কুতুবদিয়ার ৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল প্রধান শিক্ষকবৃন্দ হরি মোহন দাশকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতি শিক্ষকের প্রতি গভীর সম্মান ও ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
বক্তারা হরি মোহন দাশের অসামান্য অবদান, নিষ্ঠা ও ভালোবাসার কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তাঁরা বলেন, “স্যারের নিবেদন এবং ভালোবাসা অমজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।” তাঁর তত্ত্বাবধানে এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে এবং অজস্র শিক্ষার্থীর জীবনকে আলোকিত করেছে। বক্তারা স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা একবাক্যে জানান, হরি মোহন দাশ কেবল একজন শিক্ষক ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত অভিভাবক, একজন পথপ্রদর্শক এবং একজন মূর্ত প্রতীক, যিনি শিক্ষার আলো দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবনে নতুন দিশা দিয়েছেন। তাঁর প্রস্থানকে তাঁরা বিদ্যালয়ের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন। তাঁর শূন্যতা দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হবে বলে জানিয়েছেন অনেকে, যা তাঁর শিক্ষকতা জীবনের গভীর প্রভাবকে তুলে ধরে।
এই বিদায় কেবল একজন শিক্ষকের অবসর নয়, এটি একটি কিংবদন্তি শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, যিনি বহু বছর ধরে অমজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ইটে মিশে ছিলেন।