উখিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তহবিল সংকটের অজুহাতে স্থানীয় হোস্ট কমিউনিটির শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে হতবাক ও ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা অবিলম্বে পুনর্বহালের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টারগুলোতে কর্মরত প্রায় ১২০০ জনেরও বেশি স্থানীয় শিক্ষককে সম্প্রতি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ রবিবার (১ জুন) সকালে উখিয়ায় স্থানীয় অধিকার আদায় মঞ্চের ব্যানারে এক বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষক-জনতার পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, তহবিল সংকটের অজুহাত দিলেও মূলত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ স্থানীয় শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার জন্য ইউনিসেফের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, ইউনিসেফ রোহিঙ্গাদের কথায় কর্ণপাত করে ৪০০০-এরও বেশি স্থানীয় শিক্ষককে ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে, যা অত্যন্ত অমানবিক।
ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, স্থানীয়দের চাকরিচ্যুত করা হলেও রোহিঙ্গা শিক্ষকরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এমনকি শরণার্থীরা রেশন পাওয়ার পাশাপাশি চাকরিও করছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। স্থানীয়রা তাদের বসতভিটা ও ফসলি জমি দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, আর এখন তারাই ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
আন্দোলনকারীরা আসন্ন কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে এই ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তকে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন। তারা অবিলম্বে ছাঁটাইকৃত সকল শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায়, উখিয়া ও টেকনাফে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয়রা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এনজিওগুলো স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বহিরাগত ও রোহিঙ্গাদের নিয়োগে বেশি আগ্রহী। এই বৈষম্য আর মেনে নেওয়া হবে না। স্থানীয়দের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান তারা।
আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন, যাতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয় এবং শিক্ষকরা তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পারেন।
উল্লেখ্য, চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার (২ জুন) সকাল ৭টায় শহীদ মিনার চত্বরে আরও একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।