অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর জোর দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
গতকাল (২৮ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: জলবায়ু বাজেট ও বাংলাদেশ উপকূল’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, জলবায়ু খাতে বর্তমান বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল ও অপরিকল্পিত। এর ফলে দুর্বল উপকূলীয় সুরক্ষা অবকাঠামো দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এবং দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়লেও বরাদ্দ বাড়েনি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের নেটওয়ার্ক ইক্যুইটিবিডি আয়োজিত এই সেমিনারের সহ-আয়োজক ছিল কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিপিআরডি, সিডিপি ওয়াটার কিপারর্স বাংলাদেশ, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলন, বিসি জেএফ, উদয়ন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা ও এসডিআই। সেমিনারে বক্তারা জাতীয় বাজেটে জিডিপির ন্যূনতম ৩ শতাংশ জলবায়ু অর্থায়নে বরাদ্দ এবং ৪ কোটি উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকার টেকসই সুরক্ষায় খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার বরাদ্দ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জনাব রফিকুল আলম তাঁর বক্তব্যে জলবায়ু খাতে অপ্রতুল বরাদ্দের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা এখনো জিডিপির মাত্র ০.৭৫ শতাংশ বরাদ্দ দিচ্ছি, যেখানে প্রয়োজন ন্যূনতম ৩ শতাংশ। উপকূল সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।” তাঁর এই বক্তব্য উপকূলের বাস্তব চিত্রকে স্পষ্ট করে তোলে, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, “আন্তঃসীমান্ত নদীর সমস্যা সমাধান ছাড়া ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।” বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও গুরুত্বের ওপরও তিনি জোর দেন। এছাড়া, তিনি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ শিশুর জাতীয় বাজেটে অনুপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে পানি ব্যবস্থা নীতি, নিরাপদ মাইগ্রেশন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী সঞ্চালনা করেন। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কাউসার রহমান, পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সম্পাদক মোতাহার হোসেন, সিডিপি-এর নির্বাহী পরিচালক, জনাব সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম, এসডিআইয়ের সহকারী পরিচালক আশরাফ হোসেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রসুল বাবুল ও বিএনএনআরসির নির্বাহী পরিচালক এএইচএম বজলুর রহমান প্রমুখ।
উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় জলবায়ু অর্থায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। এই সেমিনার থেকে উঠে আসা দাবিগুলো আগামী জাতীয় বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হওয়া উচিত।